শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০২:২২ পূর্বাহ্ন

আমরা কি বিশ্ব মন্দার মুখোমুখি?
রিপোর্টারের নাম / ১৭৭ বার
আপডেট সময় শনিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৩

 

করোনার কারণে পৃথিবী আর আগের মত নেই। এই মহামারি যেমন মানুষকে স্বাস্থ্য ও মানসিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত করেছে তেমনি বিপর্যস্ত করেছে অর্থনীতিও। শ্রীলঙ্কাসহ অনেক দেশ এরই মধ্যে চরম সংকটে পড়েছে। অনেকে আশঙ্কা করছেন, গোটা বিশ্ব মন্দার মুখে পড়তে যাচ্ছে। তবে বেশিরভাগ অর্থনীতিবিদ এখনও বিশ্বাস করেন, এই বছর মন্দার আশঙ্কা কম।

করোনার কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে যে অনিশ্চয়তা রয়েছে তা এখনও কাটেনি। এরই মধ্যে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে নতুন করে সংকটে ফেলে দিয়েছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ঘিরে বিভিন্ন দেশের এক-অন্যের প্রতি নিষেধাজ্ঞা, চীনের জিরো কোভিড নীতি, মুদ্রাস্ফীতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সুদ বৃদ্ধি সব মিলিয়ে বিশ্ব এক সংকটের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

সামরিক যুদ্ধের বিপরীতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমা দেশগুলো শুরু করেছে অর্থনৈতিক যুদ্ধ। তারা এক-অন্যের বিরুদ্ধে দিচ্ছে নানা নিষেধাজ্ঞা। এতে কেবল রাশিয়া বা ইউক্রেন সংকটে পড়ছে তা নয়, প্রভাব পড়ছে পুরো বিশ্বে।

অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, উচ্চ মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি আগে থেকেই ছিল, এখন যুক্ত হচ্ছে নিম্ন প্রবৃদ্ধি। নতুন এক মন্দার মুখে সারা বিশ্ব।

এদিকে এরইমধ্যে ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ অর্থনৈতিক মন্দার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে ভারত মহাসাগরীয় দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা।

আকাশছোঁয়া মুদ্রাস্ফীতি, দুর্বল সরকারি অর্থব্যবস্থা এবং করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতি এই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ। এতে লঙ্কান সরকারের অন্যতম রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটনশিল্প ধসে পড়েছে, বিদেশি রেমিট্যান্স পৌঁছেছে তলানিতে। আর এর প্রভাবে নিত্যপণ্যের দাম গত এক মাসে কয়েক ধাপে ২৫ শতাংশ বেড়েছে।

অন্যদিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে পরিচিত যুক্তরাষ্ট্র করোনা সংকটের ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ৪০ বছরে সর্বোচ্চ দাঁড়িয়েছে। শ্রম পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (সিপিআই) অনুসারে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তা মূল্যসূচক গত বছরের তুলনায় ৭ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে, যা ১৯৮২ সালের পর সর্বোচ্চ।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির জন্য ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের দিকে ইঙ্গিত দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতির রাশ টেনে ধরতে নীতি সুদহার বাড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ। মূলত করোনাভাইরাসজনিত বিধিনিষেধ উঠে যাওয়ার পর বিশ্বব্যাপী যে সরবরাহ সংকট সৃষ্টি হয়,তার জেরে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার রেকর্ড উচ্চতায় উঠেছে। ফেব্রুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্রের মূল্যস্ফীতির হার ৪০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উঠেছে।

এর আগে নিউ ইয়র্কের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ডুডলি সতর্ক করেছিলেন যে, একটি মন্দা এখন ‘কার্যত অনিবার্য’।

ওয়াশিংটন ডিসির জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক তারা সিনক্লেয়ার বলেছেন, ‘মন্দার ভবিষ্যদ্বাণী করা অবিশ্বাস্যভাবে কঠিন। তবে আমরা জানি যে, আমরা একবার মন্দার সম্মুখীন হচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘সাধারণ নীতিনির্ধারকরা তাদের পূর্বাভাসে মন্দার দিকটি কম আনেন। স্বাভাবিক সময়ে অর্থনীতির পূর্বাভাস দেয়ার দিকে মন দেন তারা।’

মন্দার পূর্বাভাস বিষয়ে বিশেষঞ্জ ডিউক ইউনিভার্সিটির ফুকা স্কুল অফ বিজনেসের অধ্যাপক ক্যাম্পবেল আর হার্ভে বলেছেন, ‘আমরা একটি কঠিন সমস্যা পেয়েছি। মন্দার একটি বাস্তব ঝুঁকি রয়েছে।’

এদিকে করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় কঠোর লকডাউন দেয়া হয়েছে চীনের সাংহাই প্রদেশে। সাংহাইতে বিশ্বের ব্যস্ততম কন্টেইনার বন্দর দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। বন্দরটিতে পণ্য আনলোড করার জন্য শত শত জাহাজকে সারিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। এতে বিঘ্ন ঘটছে বিশ্ব বাণিজ্যে।

হংকং ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চীনা অর্থনীতি বিশেষজ্ঞ কারস্টেন হোলজ বলেছেন, এই বছরে চীনের ৫.৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করার সম্ভাবনা কম।

তিনি বলেছেন, চীনে করোনার সংক্রমণ এখন একেবারে শূন্য হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এতে সরবরাহ বিঘ্নিত হবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। আর এতে করে পশ্চিমা কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সুদহার বাড়ানোর আশঙ্কাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর

জনপ্রিয় সংবাদ
সর্বশেষ সংবাদ