ইতালির উপকূলে পাহাড়ের চূড়ায় মনোরম সৌন্দর্যের গ্রাম সেবোরগা। কেবল তিন শতাধিক মানুষের বসবাস ছোট্ট এই গ্রামে। এই অল্প জনসংখ্যা নিয়েও তাদের আছে একটি বিশাল স্বপ্ন বাস্তবায়নের ইচ্ছা। পুরোপুরি একটি স্বাধীন ও স্বার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার চেষ্টায় ছয় দশক ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন স্বপ্নচূড়ার পথে।
সেবোরগা বর্তমানে প্রিন্সিপালিটি হিসেবে একজন ছোট রাজার অধীনে রয়েছে। এরই মধ্যে এই ক্ষুদ্র রাজ্যের নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সংগীত, পাসপোর্ট, স্ট্যাম্প ও মুদ্রার পাশাপাশি রাজতন্ত্রও রয়েছে।
এই অঞ্চলের বাসিন্দারা এখন চাইছেন রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন, সার্বভৌমত্ব ও এর আইনি স্বীকৃতি। ১৯৬০ সাল থেকে এমন দাবি বাস্তবায়নের সংগ্রামে রয়েছেন পাঁচ বর্গমাইল আয়তনের এই গ্রামের বাসিন্দারা।
এখন পর্যন্ত ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় ইম্পেরিয়া প্রদেশের কেবল একটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও মনোরম গ্রাম হিসেবেই স্বীকৃত এই সেবোরগা।
কেবল তিন শতাধিক মানুষের বসবাস সেখানে। এর আয়তন প্রায় পাঁচ বর্গমাইল। ইতালি-ফ্রান্স সীমান্তের কাছাকাছি এই গ্রামের অবস্থান।
এই গ্রামে ঢোকার সড়কটিতে আছে একটি অনানুষ্ঠানিক সীমান্ত ক্রসিং। সেখানে আছে সেবোরগার পতাকার রঙের সঙ্গে মিল রেখে একটি প্রহরীকক্ষ। বিভিন্ন আয়োজন ও কর্মসূচিতে সেখানে দায়িত্ব পালন করেন স্বঘোষিত ও সুসজ্জিত সীমান্তরক্ষীরা।
পাহাড়ের ওপরে ভীষণ সুন্দর একটি অবস্থানে থাকা নৈসর্গিক এই গ্রামটি থেকে নিচের নয়নাভিরাম দৃশ্য চোখে পড়ে।
সেখান থেকে নজরে পড়ে মোনাকো প্রিন্সিপালিটি। এটিই বিশ্বের সবচেয়ে আলোচিত খুদে রাষ্ট্র।
সেবোরগাবাসীর স্বাধীনতা ও স্বার্বভৌমত্ব অর্জনে নিরন্তর এই প্রচেষ্টার পেছনে মোনাকোর স্বাধীনতা একটি বড় অনুপ্রেরণা হিসেবে কাজ করছে বলে ধারণা করা হয়।
স্বাধীন স্বার্বভৌমত্ব অর্জনের লড়াই সম্পর্কে সেবোরগার প্রিন্সেস নিনা বলেন, ‘আইনজীবীরা এসব নিয়ে কাজ করছেন। এ কারণেই তো আমাকে রাজকুমারী নির্বাচিত করা হয়েছে।’
সেবোরগাতে রাজতন্ত্র উত্তরাধিকার সূত্রে নির্বাচিত হয় না। সাত বছর অন্তর সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমবারের মতো নিনা এই পদে নির্বাচিত হলেন।
জার্মানিতে জন্ম নেয়া নিনা ডবলার মেনেগাট্টো মোনাকোতে বাস করতেন। ১৫ বছর আগে সেবোরগার সাবেক রাজা মারসেলোর সঙ্গে বিয়ে হয় নিনার। তখনই তিনি প্রথম জানতে পারেন সেবোরগার বাসিন্দাদের স্বাধীনতার স্বপ্নটি।
সেবোরগার স্বাধীন ও স্বার্বভৌম দেশ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার এই চেষ্টাকে ইতালির সাংবিধানিক আদালত ও ইউরোপীয় মানবাধিকার আদালত নাকচ করে দেয়।