মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৯:০৫ পূর্বাহ্ন

নাপা সিরাপে নয়-প্রেমিকের শর্ত মানতে তার পাঠানো মিষ্টি খাইয়ে দুই শিশুকে হত্যা করেন তাদেরই মা
রিপোর্টারের নাম / ৩৬৪ বার
আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩

এনই আকন্ঞ্জি ,
প্রেমিকের দেওয়া শর্ত মানতে তার পাঠানো মিষ্টি খাইয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের দুই শিশুকে হত্যা করেন তাদেরই মা। দুই সন্তানকে ছাড়া আসতে পারলে তাকে বিয়ে করবেন―প্রেমিক শফিউল্লাহর এমন শর্ত মানতে পরিকল্পিতভাবে তাদের হত্যার উদ্দেশ্যেই বিষ মেশানো মিষ্টি খাওয়ানো হয়। বিষ মিশিয়ে শফিউল্লাহ ওই মিষ্টি পাঠান।

পুলিশের তদন্তে এমনটাই উঠে এসেছে। একই সঙ্গে আদালত ও পুলিশের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে ‘ঘাতক মা’ রিমা বেগমও একই কথা জানিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে ঘটনার সাত দিন পর শিশুদের মৃত্যুর হত্যা রহস্য উন্মোচিত হলো।

সংবাদ সম্মেলন করে পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর থেকেই ওই নারীকে নজরদারিতে রাখা হয়। মোবাইল ফোনের কথার সূত্র ধরে তাকে সন্দেহ করে পুলিশ। শেষ পর্যন্ত সেই সূত্র ধরেই পুলিশ হত্যাকাণ্ডের রহস্য উন্মোচন করতে সক্ষম হয়।

জ্বর থাকা দুই শিশু মো. ইয়াছিন খান (৭) ও মো. মোরসালিন খান (৫) নাপা সিরাপ খেয়ে মারা যায় বলে পরিবারের পক্ষ থেকে শুরু থেকে অপপ্রচার চালানো হয়। তবে এ ঘটনার দিন শিশুসন্তানদের প্রতিবন্ধী বাবা বাড়িতে ছিলেন না।

শিশুদের জন্য যে ফার্মেসি থেকে নাপা সিরাপ আনা হয় সেখান থেকে আটটি স্যাম্পল নিয়ে পরীক্ষা করে ঔষধ প্রশাসন। তবে পরীক্ষায় কোনোটাতেই ক্ষতিকারক কিছু পাওয়া যায়নি বলে ঔষধ প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়। যে সিরাপ খেয়ে মৃত্যু হয়েছে সেটিও ঔষধ প্রশাসন পরীক্ষা করে দেখছে।

পুলিশ বলছে, ওই দুই শিশুর ভিসেরা রিপোর্টের পাশাপাশি নাপা সিরাপের পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য তারা অপেক্ষা করছে। জবানবন্দি দেওয়া মায়ের কথার সঙ্গে ওই রিপোর্টের মিল থাকে কি না, সেটিও যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।

এদিকে ঘাতক মা রিমা বেগমকে আসামি করে বৃহস্পতিবার সকালে আশুগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করে শিশুদের বাবা উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের বাসিন্দা ও ইটভাটার শ্রমিক মো. ইসমাইল হোসেন খান সুজন। এর পরই পুলিশ ওই নারীকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আদালতে পাঠায়।

দুপুরে হওয়া সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আনিসুর রহমান জানান, রিমা বেগম একটি চালকলে কাজ করেন। সেখানকার শ্রমিক সর্দার শফিউল্লাহর সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শফিউল্লাহ ওই নারীকে আর্থিকভাবেও সাহায্য করতেন। এরপর তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। স্বামী সুজন চোখে কম দেখেন ও হাঁটাচলাতেও সমস্যা বিধায় রিমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন শফিউল্লাহ। তবে শর্ত দেন, দুই সন্তানকে ছেড়ে আসতে হবে। এর পর থেকে দুজন মিলে হত্যার পরিকল্পনা করেন।

পুলিশ সুপার আরো জানান, ১০ মার্চ বিকেলে বিষ মিশিয়ে মোট পাঁচটি মিষ্টি পাঠান শফিউল্লাহ। এর মধ্যে ইয়াছিন তিনটি ও মোরসালিন দুটি মিষ্টি খায়। এরই মধ্যে তাদের দাদিকে দিয়ে নাপা সিরাপ আনানো হয়। মিষ্টি খাওয়ার পর দুজন অস্বস্তি বোধ করলে ঘটনা ধামাচাপা দিতে নাপা সিরাপের কথা বলা হয়।

তিনি জানান, ঘটনার দিন ১৫ বার শফিউল্লাহ ও রিমার মধ্যে কথা হয়। সেই ফোন কলের সূত্র ধরেই এগোতে থাকে পুলিশ। এরই মধ্যে শফিউল্লাহ কৌশলে রিমার কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি নিয়ে যান। কেননা যে সিম ব্যবহার করে রিমা কথা বলতেন সেটি ছিল শফিউল্লাহর।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর

জনপ্রিয় সংবাদ
সর্বশেষ সংবাদ