ভারতে বুলডোজার দিয়ে মুসলিমদের বাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়ার অভিযোগ
প্রত্যাশা টিভি ডেস্ক:নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে নিয়ে ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির নেতাদের বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে পুরো ভারতে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। দেশটির কিছু কিছু স্থানে বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে অনেক মুসলিমের বাড়িঘর ভেঙে দিয়েছে।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভারতজুড়েই বুলডোজারের শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়েছে।
উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের প্রয়াগরাজে ১০ জুনের কথিত সহিংসতার মাস্টারমাইন্ড জাভেদ মোহাম্মদের বাড়ি রোববার ভেঙে দিয়েছে প্রয়াগরাজ ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (পিডিএ)। এ সময় সেখানে পুলিশ মোতায়েন ছিল।
ভাঙার আগে সকালে জাভেদের বাড়ি তল্লাশি করা হয়। পুলিশ বলছে, অভিযুক্তের বাড়িতে বেআইনি অস্ত্র ও নিষিদ্ধ পোস্টার পাওয়া গেছে।
প্রয়াগরাজ পুলিশের সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অজয় কুমার বলেন, ‘আমরা অভিযুক্তের বাড়ি থেকে টুয়েলভ বোরের অবৈধ পিস্তল, থ্রিফিফটিন বোরের পিস্তল, কার্তুজ এবং মাননীয় আদালতের বিরুদ্ধে আপত্তিজনক লেখা নথি পেয়েছি।’
সহিংসতায় জড়িত থাকার অভিযোগে এরই মধ্যে জাভেদ মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
অভিযুক্ত জাভেদ ওয়েলফেয়ার পার্টি অফ ইন্ডিয়ার নেতা। তার মেয়ে আফরিন ফাতেমাও এই দলের একজন কর্মী। গত বছর ভারতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধেও বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন ফাতেমা। পুলিশ বলছে, চলতি সপ্তাহের সহিংসতার বিষয়ে ফাতেমার ভূমিকাও তদন্ত করা হচ্ছে।
এ ঘটনায় ৪৮ বছর বয়সী ইমামুদ্দিন আলম বলেন, ‘আমরা বুলডোজার দেখার আগেই তার শব্দ শুনেছিলাম। আমি আমার কাছের মুদির দোকান নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। সেখানে ধ্বংসস্তূপ ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।’
তিনি বলেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতারা আমাদের উসকে দেয়, আমরা প্রতিক্রিয়া জানালে আমাদের গ্রেপ্তার করে এবং আমাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়।’
এদিকে উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথও সহিংসতায় জড়িত মুসলিমদের অবৈধ বাড়ি ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
জাভেদের বাড়ি ভাঙার প্রেক্ষাপটে সর্বভারতীয় মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন দলের প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি রোববার বলেছেন, যোগী আদিত্যনাথ এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির মতো আচরণ করছেন।
এদিকে গত সপ্তাহে শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাঁচি, হাওড়া, কানপুর ও সাহরানপুরসহ ভারতের বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। অনেক বিক্ষোভকারীই হিংস্র হয়ে ওঠে।
অনেক স্থানেই বিক্ষোভকারীরা দোকান ও গাড়িতে আগুন দেয় এবং পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এমনকি হাওড়ার কাছে বিজেপি অফিসেও ভাঙচুর করা হয় এবং কাছাকাছি যানবাহনে আগুন দেয়া হয়।
মুসলিম পলিটিক্যাল কাউন্সিল অফ ইন্ডিয়ার সভাপতি ড. তসলিম রহমানি বলেছেন, ‘আমাদের প্রতিবাদ হতে হবে গণতান্ত্রিক ও শান্তিপূর্ণ, যাতে আমরা প্রতিশোধের জন্য উসকে না দিই এবং আমাদের ভাবমূর্তি যাতে আমরা নষ্ট না করি। সহিংসতা আমাদের মামলাকে দুর্বল করে দেবে।’