নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে মধ্যরাতের অনাস্থা ভোটে ইমরান খানের প্রধানমন্ত্রিত্বের অবসান ঘটল। এখন নতুন প্রধানমন্ত্রী খুঁজছে দেশটি।
পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদে ইমরানের ভোটে হারার খবর আসার পরই পক্ষে-বিপক্ষে মত দিতে থাকেন অনেকেই। কেউ বলছেন; নতুন ভোরের সূচনা হলো। আবার কেউ বলছেন, পাকিস্তানের জন্য এই দিনটি বিষাদময় একটি দিন।
স্থানীয় সময় শনিবার রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভারপ্রাপ্ত স্পিকার আয়াজ সাদিকের সভাপতিত্বে অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটি হয়।
এতে ৩৪২ আইন প্রণেতার মধ্যে অন্তত ১৭২ জনের সমর্থন প্রয়োজন ছিল বিরোধীদের। ১৭৪ ভোট পেয়ে তাদের অনাস্থা প্রস্তাব পাস হয়।
ভোটের ফলের পর পাকিস্তান মুসলিম লীগের (নওয়াজ) সহসভাপতি মরিয়ম নওয়াজ এক টুইট বার্তায় লেখেন, ‘আমার প্রিয় পাকিস্তানের দুঃস্বপ্ন শেষ। এখন নিরাময় ও মেরামতের সময়।’
বিদায়ী শিক্ষামন্ত্রী এবং ইমরানের তেহরিক-ই-ইনসাফের (পিটিআই) নেতা শাফকাত মেহমুদ অবশ্য বলেছেন, ‘এটি পাকিস্তানের জন্য একটি দুঃখজনক দিন।
‘একজন ন্যায়পরায়ণ ও নির্ভীক নেতাকে দুর্নীতিবাজ মাফিয়াদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হয়েছিল। তাকে চলে যেতে হলো।’
পাকিস্তান মুসলিম লীগ-নওয়াজের (পিএমএল-এন) সাদ রফিক ‘পুরোনো পাকিস্তানে’ সবাইকে আমন্ত্রণ জানান টুইট বার্তায়।
পিটিআই নেতা ও সিনেটর ফয়সাল জাভেদ খান লিখেছেন, ‘সম্মানের সঙ্গে বের হয়ে গিয়েছি। কারো কাছে মাথানত করিনি।’
সাংবাদিক সিরিল আলমেদা টুইট করেছেন, ’হাইব্রিড শাসন মৃত।’
আরেক সাংবাদিক হাসান জায়েদি লিখেছেন, ‘পাকিস্তানের জন্য আরেকটি রেকর্ড গড়লেন ইমরান। প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে অনাস্থা ভোটে হেরে বিদায় নিলেন তিনি।’
ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী থাকবেন কি না, সে প্রশ্নে গত কয়েক দিন ধরে সরগরম ছিল পাকিস্তান। ঘটেছে নানা ঘটনা। তবে আদালতের রায়ে সমীকরণ বদলে পাকিস্তানের রাজনীতির মোড় ঘুরতে শুরু করে অন্যদিকে।
বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন অভিযোগ এনে অনাস্থা ভোট চাইছিলেন ইমরান বিরোধীরা। গত ২৮ মার্চ ছিল দেশটির রাজনীতিতে একটি ঘটনাবহুল দিন। এদিন দুপুরে ইমরানের ক্ষমতায় টেকা-না টেকা নিয়ে বিরোধী পক্ষ জাতীয় পরিষদে যে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিল, তা খারিজ হয়ে যায়।
অধিবেশনের শুরুতে প্রস্তাব খারিজ করে দেন ডেপুটি স্পিকার কাশিম সুরি। ব্যাপারটিকে তিনি আখ্যা দেন ‘অসাংবিধানিক’ বলে। ষড়যন্ত্রের কারণে এই প্রস্তাব তোলা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন কাশিম সুরি। পরে অধিবেশন মুলতবি করেন তিনি। একপর্যায়ে বিরোধী দলগুলোর তোপের মুখে পড়তে হয় তাকে। স্লোগান দিয়ে প্রতিবাদ জানান বিরোধীরা। হট্টগোল তৈরি হয়।
এর পরই প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের পরামর্শে পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দেন প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা দেয়া হয়। কর্তৃপক্ষ বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, নিয়ম অনুযায়ী আগামী তিন মাসের মধ্যে এই দেশে নতুন করে আবার নির্বাচন হবে।
পরে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানমন্ত্রীর নাম চেয়ে ইমরান খান ও বিরোধীদলীয় নেতাকে চিঠি পাঠান দেশটির প্রেসিডেন্ট। চলতে থাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রক্রিয়াও।
এরই মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট অবস্থান গ্রহণ করে। শুক্রবার পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে অন্তর্বর্তী নির্বাচনের যে আদেশ ছিল তা খারিজ করে দেয় আদালত। পার্লামেন্ট চালুর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে আনা অনাস্থা প্রস্তাবের ওপর ভোটাভুটির নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট।
শনিবার জাতীয় অধিবেশন ডাকতে বলা হয় প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকে। এমনকি কখন ভোট হবে, তার সময় ঠিক করে দেয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভোটাভুটি গড়ায় শনিবার মধ্যরাতে।
নিয়ম অনুযায়ী, নতুন প্রধানমন্ত্রী বেছে নিতে আগামী সোমবার জাতীয় পরিষদে আবার ভোটাভুটি হবে। সে জন্য রোববার বেলা ১১টার মধ্যে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে হবে।
ইমরান খানের বিরুদ্ধে দেশ শাসনে অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে এর আগে গত ৮ মার্চ অনাস্থা প্রস্তাব জমা দিয়েছিল বিরোধী দলগুলো। এই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা ও ভোটাভুটির জন্য অধিবেশন ডাকতে স্পিকার আসাদ কায়সারের প্রতি লিখিত আবেদন জানান তারা। তবে একপর্যায়ে তা জাতীয় পরিষদে উত্থাপন করা হলে ৩ এপ্রিল খারিজ হয়ে যায়।
দুর্নীতির দায়ে নওয়াজ শরিফ অভিশংসিত হওয়ার পর ২০১৮ সালে চার দলের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আসেন ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনীতিক বনে যাওয়া ইমরান খান। ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত মেয়াদ ছিল তার।