এম কে আই জাবেদ, মুরাদনগর:
কুমিল্লার মুরাদনগরে এই প্রথম ১১ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে কাঙ্ক্ষিত ফলন পেয়ে খুশি চাষিরা। উপজেলার ২২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় এবার সূর্যমুখী চাষ করেছেন ৭০ জন কৃষক। এসব এলাকায় মাটি ও আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষাবাদের জন্য উপযোগী। সময় ও অর্থ কম ব্যয় করে সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।
কৃষি বিভাগ সাধারণ কৃষকদের সূর্যমুখী চাষে উদ্বুদ্ধ করতে উদ্যমী কৃষকের মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে মুরাদনগর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের ১১ হেক্টর জমিতে প্রথমবারের মতো উপজেলায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার ও বীজ প্রণোদনার মাধ্যমে চাষ হচ্ছে সূর্যমুখী ফুলের।
বর্তমানে সূর্যমুখী ফুলের সমারোহে মেতে উঠেছে উপজেলার মাঠগুলো। আবহাওয়া এখন পর্যন্ত অনুকূলে থাকায় কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তেল জাতীয় অন্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখীর চাষ অনেক সহজলভ্য ও উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় কৃষকেরা এতে উৎসাহিত হয়ে উঠবেন বলে উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে।
নবীপুর পূর্ব ইউনিয়নের বাখরনগর গ্রামে সূর্যমুখী চাষ করা জমিতে দেখা যায়, ফুটে থাকা হলুদ সূর্যমুখী ফুলের সমাহারে এক নয়নাভিরাম দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে। চারদিকে হলুদ রঙের ফুলের মনমাতানো ঘ্রাণ আর মৌমাছিরা ছুটছেন এক ফুল থেকে অন্য ফুলে তাতে মুখরিত হয়ে উঠেছে কৃষকের জমি। এ এক দৃষ্টিনন্দন বাগান। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য অবলোকনে শুধু প্রকৃতিপ্রেমীই নয় বরং যে কারো হৃদয় কাড়বে। তবে সূর্যমুখী ফুল চাষের লক্ষ্য নিছক বিনোদন নয়। মূলত ভোজ্যতেল উৎপাদনের মাধ্যমে খাদ্য চাহিদা মেটাতে অর্থনীতিক লাভবানে এ চাষ করা হচ্ছে।
মুরাদনগর উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, সূর্যমুখীর চাষাবাদ কৃষকের কাছে জনপ্রিয় করে তুলতে উপজেলার আন্দিকোট, পূর্বধইর পশ্চিম, বাঙ্গরা পূর্ব, কামাল্লা, যাত্রাপুর, রামচন্দ্রপুর উত্তর, রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ, মুরাদনগর, নবীপুর পূর্ব, নবীপুর পশ্চিম, ধামঘর, পাহাড়পুর, বাবুটিপাড়া, টনকি মোট ১৪টি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ৭০ জন কৃষক ১১ হেক্টর জমিতে প্রণোদনার প্রকল্পের আওতায় পরীক্ষামূলকভাবে এফ-১ (হাইব্রিড) জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছেন। এতে সংশ্লিষ্ট উপজেলার ৭০ জন কৃষক সুবিধাভোগী হিসেবে অংশ নিয়েছেন। ফুলের সৌন্দর্য দেখতে খামারে আসছেন দর্শনার্থীরা। অনেকে এটি চাষ করার পরামর্শও নিচ্ছেন।
তাই অন্যান্য ফসলের চেয়ে সূর্যমুখী চাষে বেশি লাভের প্রত্যাশা অনেক বেশি। সূর্যমুখী ফুলের চাষ করলে ফুল থেকে তেল, খৈল ও জ্বালানি পাওয়া যায়। প্রতি কেজি বীজ থেকে কমপক্ষে আধা লিটার তৈল উৎপাদন সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৭ মণ থেকে ১০ মণ বীজ উৎপাদন হয়। তেল উৎপাদন হবে প্রতি বিঘায় ১৪০ লিটার থেকে ২০০ লিটার পর্যন্ত। প্রতি লিটার তেলের বাজার মূল্য প্রায় ২৫০ টাকা। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ হয় সর্বোচ্চ সাড়ে ৩ হাজার টাকা। বর্তমানে বাজারে ভোজ্যতেলের আকাশছোঁয়া দাম হওয়ার কারণে চাহিদা বেড়েছে সরিষা ও সূর্যমুখী তেলের।
এছাড়া সূর্যমুখী ফুলের তেল অধিক পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। তাই ডায়াবেটিস ও হৃদরোগীদের জন্য এই তেল অন্যান্য তেলের চেয়ে অনেক উপকারী ও স্বাস্থ্যসম্মত।
বাখরনগর গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন বলেন, কৃষি অফিসের সহযোগিতায় আমি এই প্রথম ২৫ শতাংশ জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। আমার সূর্যমুখী ফুলের জমি দেখার জন্য দূরদূরান্ত লোকজন ছুটে আসছে। বিকেল বেলায় অনেকে লোকজন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দেখতে আসেন। জমির পাশে ছবি তুলেন সময় কাটান অনেকেই। তা দেখে আমার খুবই আনন্দ লাগে! শুনছি এটি খুবই লাভজনক একটি ফসল।
উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এখলাছুর রহমান বলেন, সূর্যমুখী এক দিকে মনোমুগ্ধকর ফুল অন্যদিকে লাভজনক ফসল। কৃষকদের বিস্তারিত জানিয়ে সূর্যমুখী আবাদ করার পরিকল্পনা করি। নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে সারিবদ্ধভাবে বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের ৯০-১০০ দিনের মধ্যে ফসল তোলা যায়। সামান্য পরিমাণ রাসায়নিক সার ও দুবার সেচ দিতে হয় এ ফসলে। প্রতি একর জমিতে ২০-২২ হাজার টাকা খরচ হয়। আর এক একর জমির উৎপাদিত বীজ থেকে ৬০-৬৫ হাজার টাকা লাভ করা সম্ভব। সূর্যমুখী গাছ জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মাঈন উদ্দিন আহমেদ সোহাগ বলেন, এ উপজেলায় প্রথমবারের মতো সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। আগামীতে সূর্যমুখীর চাষ করবে কৃষকরা। সূর্যমুখীর বীজ থেকে যে তেল উৎপন্ন হয় তা স্বাস্থ্যসম্মত ও মানসম্পন্ন। অলিভ ওয়েলের পরেই সূর্যমুখী তেলের অবস্থান। সয়াবিন ও সরিষা ভোজ্য তেলের ঘাটতি পূরণ করবে সূর্যমুখী তেল। প্রথমবার কৃষকেরা সূর্যমুখী চাষ করে লাভবান হবেন বলে আমি আশাবাদী।
কৃষকদের এসব তেল প্রক্রিয়াজাত এবং বাজারজাত করার ক্ষেত্রেও কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করা হবে বলেও জানান তিনি।
মুরাদনগর (কুমিল্লা)প্রতিনিধি
ফোন ০১৭২৫১০৩৬৯৬
তাং ০৭/০৪/২০২২