মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৫:২৮ অপরাহ্ন

  • বাংলা বাংলা English English

ভোট চুরি করলে জনগণ বিএনপির আন্দোলনে সাড়া দিত: প্রধানমন্ত্রী 
রিপোর্টারের নাম / ১১০ বার
আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩

 

১৯৯৬ সালে আন্দোলনের মুখে বিএনপি সরকারের পতনের স্মৃতি স্মরণ করিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচন করে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছিল। তখন আওয়ামী লীগের আন্দোলনে সাড়া দিয়ে জনগণ তাদের ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য করেছিল। একইভাবে আওয়ামী লীগও যদি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় আসতো, জনগণ এক্ষেত্রেও তাই করত।

বুধবার একাদশ জাতীয় সংসদের ১৭তম অধিবেশনে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির মহাসচিব ও সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা একথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা যদি সত্যিই ভোট নিয়ে খেলতাম, যদি সত্যি ভোট ছিনতাই করতাম, তাহলে ওই যে ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের মতো যেভাবে জনগণ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে ক্ষমতা থেকে হটিয়েছিল, সেভাবে আমাদের হটাত।

‘মানুষ তো সেখানে সাড়া দেয়নি। কারণ, মানুষ তো ভোট দিতে পেরেছে। আজকে ভোটের যতটুকু উন্নয়ন সেটা আমরাই করেছি।’

২৬ বছর আগের সেই নির্বাচনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারাদেশে সেনাবাহিনী নামিয়ে ভোটারবিহীন একটা নির্বাচন করল। সেই নির্বাচনে ৩-৪ শতাংশের বেশি ভোট পড়েনি। আর্মি নামিয়ে পুরো নির্বাচনকে কুলষিত করল।

‘মানুষের অধিকার কেড়ে নিলে মানুষ কিন্তু বসে থাকে না। আমরা আন্দোলনের ডাক দিলাম সেই আন্দোলনে মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়ল। এরপর ১৯৯৬ সালের ৩০ মার্চ খালেদা জিয়া পদত্যাগ করতে বাধ্য হলেন।’

গত দুটি সংসদ নির্বাচনের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৪ সালের নির্বাচন হলো, সেই নির্বাচন যাতে না হয় তার জন্য নানান চক্রান্ত করলেন খালেদা জিয়া। এরপর ২০১৮ সালের নির্বাচন হলো। বিএনপি দুপুর ১২টার পর থেকে সড়ে গেল।’

বিএনপির আন্দোলনের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যদি আমরা ভোট না পেতাম ওই যে খালেদা জিয়া আন্দোলনের ডাক দিলেন, অবরোধে ডাক দিলেন, এত আন্দোলন করার পর জনগণের সাড়া পেল না কেন?’

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির দশম সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিএনপি। একতরফা সেই নির্বাচনে সহজ জয় পায় আওয়ামী লীগ। বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সে সময় জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরের একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও তার জোট পায় আরও বড় জয়। বিএনপি ও তার জোটের অভিযোগ, তাদের পক্ষের ভোটারদেরকে বাধা দেয়া হয়েছে। আর আগের রাতেই সিল মেরে বাক্স ভরাট করা হয়েছে।

২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি সরকার পতনের ডাক দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধের ডাক দেয় বিএনপি। সেই অবরোধ আর প্রত্যাহার করা হয়নি। সেই আন্দোলনে খালি হাতে ঘরে ফেরা দলটি এখন আবার সরকার পতনের একদফা আন্দোলনে নামার কথা বলছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর আন্দোলন গড়ে তুলতে পারেনি তারা।

বাংলাদেশে রাজনৈতিক পালাবদলের ইতিহাস তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘স্বাধীনতার পর মাত্র ৯ মাসের মধ্যে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটা সংবিধান দিলেন, শুধু সংবিধান দিলেন না, সংবিধানের ভিত্তিতে একটা নির্বাচনের দিলেন। অর্থাৎ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিটা তিনি সুষ্ঠুভাবে চালু করলেন।

‘এরপর ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হলো। সংবিধান লংঘন করে আর্মি রুলস লঙ্ঘন করে প্রথমে জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এলে তিনি একাধারে সেনাপ্রধান, একাধারে রাষ্ট্রপতি।

‘তার পদাঙ্ক অনুসরণ করে জেনারেল এরশাদও ঠিক একই কাজ করলেন। সেনাপ্রধান আবার নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করলেন। এভাবেই তো ক্ষমতার পালাবদল শুরু হলো।’

অগণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ক্ষমতা দখলের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্র দিতে চাই দেশে। বাংলাদেশি ইতিহাসে ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি এরপর ২০০১ সালে ক্ষমতা হস্তান্তর করি। বাংলাদেশি ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে কখনো ক্ষমতা হস্তান্তর হয় নাই। একমাত্র ২০০১ সালের ১৬ জুলাই যখন আমি ক্ষমতা হস্তান্তর করে আসি, তখনই কেবল শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল।’

এরশাদ সরকারের পতনের পর নির্বাচন শেষে সরকার গঠনের প্রস্তাব পেয়েও তা ফিরিয়ে দেন বলে জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি বলেন, “১৯৯১ সালের নির্বাচনে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। আওয়ামী লীগ পায়নি, বিএনপি পায়নি, জাতীয় পার্টিও না। তখন রাষ্ট্রপতি আমাদের ডাকলেন আমাকে বললেন, ‘আপনি তো জাতীয় পার্টি ও জামায়াতকে নিয়ে সরকার গঠন করতে পারেন।’ আমি বলেছিলাম, ‘না, সংখ্যাগরিষ্ঠতা যেহেতু পাইনি আমি সরকার গঠন করব না।’ পরে খালেদা জিয়া জামায়াতকে নিয়ে সরকার গঠন করল।”

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর