মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৬:১৮ অপরাহ্ন

  • বাংলা বাংলা English English

যুদ্ধ ইউক্রেনে, গদি টলছে পাকিস্তানে
রিপোর্টারের নাম / ৩৩৫ বার
আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩

প্রত্যাশা টিভি ডেস্ক : রাশিয়া ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি। ঠিক সেদিনই মস্কো সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। এরপর হঠাৎ করেই ইমরানের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসে বিরোধীরা। এই প্রস্তাবের পক্ষে বিরোধীদের পাল্লাই এখন ভারী। খোদ ইমরান খান অভিযোগ করেছেন, তাঁকে উৎখাত করতে বিদেশি শক্তি সক্রিয়। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠেছে, রুশ ঘনিষ্ঠতাই কি তাহলে ইমরানের জন্য কাল হয়েছে?

এই প্রশ্ন আরও জোরালো হয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়ার এক মন্তব্যে। তিনি অবিলম্বে ‘রুশ আগ্রাসন’ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে পাকিস্তানের। এই দূরত্বে শূন্যস্থান পূরণ করতে ঢুকে পড়েছে চীন ও রাশিয়া। চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘণিষ্ঠতা অবশ্য বেশ আগের। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়তে শুরু করে তাঁর দেশের। এই ঘণিষ্ঠতা এখন কোন পর্যায়ে তা ২৪ ফেব্রুয়ারি ইমরানের মস্কো সফর থেকেই আঁচ করা যায়। এ ছাড়া জাতিসংঘে রুশ অভিযানের নিন্দা জানিয়ে তোলা সব প্রস্তাবেই চীন-ভারতের মতো পাকিস্তানও ভোট দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে।

আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পাকিস্তানের এমন অবস্থানের মধ্যেই ইমরানের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে বিরোধীরা। প্রস্তাবটি পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছেন পার্লামেন্টে বিরোধী দলীয় নেতা পাকিস্তান মুসলিম লীগের (পিএমএল-এন) শাহবাজ শরিফ। পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের ভাই তিনি। প্রস্তাবের অভিযোগগুলোর মধ্যে সরকারে বিদেশনীতিও রয়েছে। সর্বশেষ হিসাব বলছে, বিরোধীদের পক্ষে এখন পাকিস্তানের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ জাতীয় পরিষদের ১৭৭ জন সদস্য রয়েছেন। এ ছাড়া ইমরানের নিজের দলেরও কয়েকজন বিরোধী শিবিরে যোগ দেওয়ার গুঞ্জন রয়েছে। ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করতে ন্যূনতম ১৭২টি ভোটের প্রয়োজন। অর্থাৎ পার্লামেন্টে এরই মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। আজ রোববার অনাস্থা ভোট হওয়ার কথা রয়েছে পার্লামেন্টে। এই ভোটে যদি ইমরানের সরকার পড়ে যায়, তাহলে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন পিএমএল-এন নেতা শাহবাজ শরিফ।

এই অবস্থার মধ্যেই রাজধানী ইসলামাবাদে গতকাল শনিবার এক নিরাপত্তা সংলাপে সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া বলেন, ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তান গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যম ডন-এর অনলাইনে এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, জেনারেল কামার বাজওয়া বলেন, ‘রাশিয়ার নিরাপত্তাজনিত উদ্বেগ বৈধ হলেও ছোট দেশের ওপর তার আগ্রাসন কিছুতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। পাকিস্তান অব্যাহতভাবে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি এবং সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে আসছে। সংঘাতের দীর্ঘমেয়াদি সমাধানে আমরা সবপক্ষের অংশগ্রহণে অবিলম্বে আলোচনার পক্ষে।’

পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আরও বলেন, ইউক্রেনের স্বাধীনতার পর থেকেই দেশটির সঙ্গে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক দারুন। কিন্তু রাশিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্ক অনেক কারণেই দীর্ঘদিন শীতল ছিল। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই সম্পর্কের কিছুটা উন্নতি ঘটেছে। তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ব এখন দুই ভাগে বিভক্ত। একদল সংঘাতের পক্ষে, আরেকদল সহযোগিতার পক্ষে। আমি বিশ্বাস করি, আজকের বিশ্ব সহযোগিতা, শ্রদ্ধাবোধ ও সমতায় বিশ্বাসীরাই গড়েছে। বিভক্তি সৃষ্টিকারী, যুদ্ধবাজ আর কর্তৃত্ববাদীরা এই বিশ্ব গড়েনি।’

জেনারেল কামার বাজওয়া বলেন, চীনের সঙ্গে পাকিস্তানের কৌশলগত ঘণিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও পাকিস্তানের সম্পর্ক অসাধারণ। এই সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় রপ্তানি বাজার। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক আরও জোরদার করতে চায় পাকিস্তান। পাশাপাশি অন্যদের সঙ্গেও সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চায়। এ ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাজ্য, উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলো, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও জাপান পাকিস্তানের অগ্রগতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যেই স্পষ্ট ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিতে এখন দুটি শিবির দাঁড়িয়ে গেছে। রীতিমতো যুদ্ধ চলছে এই দুই শিবিরে। একটি শিবির রুশ ঘণিষ্ঠতা চায় না, অন্য শিবির চায় রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের উন্নয়ন। ইমরান খান ও তাঁর ঘণিষ্ঠরা যে দ্বিতীয় শিবিরে রয়েছেন, তা বোঝাই যায়। ইমরানের অভিযোগ, ভারতের সঙ্গে জোট বেঁধে যুক্তরাষ্ট্র তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে চায়। কারণ, পাকিস্তানের স্বাধীন বিদেশনীতি তাদের পছন্দ নয়। তাঁর দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) অভিযোগ করেছে, ইমরান খানকে হত্যার নীলনকশা চলছে।

এই অবস্থায় ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে নানা তৎপরতা চালাচ্ছেন ইমরান খান। একটি ‘গোপন চিঠি’ নিয়েও হাজির হয়েছেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, আন্তর্জাতিক একটি শক্তি তাঁকে উৎখাত করতে তৎপর। তাঁর কথায় যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ স্পষ্ট। এমনকি পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেশটিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলবও করেছিল এই অভিযোগ নিয়ে। যদিও যুক্তরাষ্ট্র অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এদিকে সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, বিরোধী জোটের সঙ্গেও আলোচনা করছেন ইমরান খান। বিরোধীরা যদি অনাস্থা প্রস্তাব প্রত্যাহার করে, তাহলে তিনি আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দেবেন- এমন একটি প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, গদি ধরে রাখতে ইমরানের চেষ্টা সফল হয় কি না। আজ রোববারই পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে সব।

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর