মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন

  • বাংলা বাংলা English English

বৈশ্বিক মন্দাতেও এগিয়ে যাবে দেশ: প্রধানমন্ত্রী
রিপোর্টারের নাম / ২৪০ বার
আপডেট সময় মঙ্গলবার, ২৮ মার্চ ২০২৩

 

করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষকে কষ্ট থেকে দূর রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি জানান, সংকটকালেও বাংলাদেশ যে এগিয়ে যেতে পারে, তা প্রমাণিত।

ঢাকার হোটেল সোনারগাঁওয়ে বৃহস্পতিবার সকালে ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স: ইস্যুস অ্যান্ড চ্যালেঞ্জেস অফ ইমপ্লিমেন্টেশন’-এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন সরকারপ্রধান।

সংকটকালেও দেশকে এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় পুর্নব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ পিছিয়ে থাকবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে এবং আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অপরদিকে করোনাভাইরাসের আঘাত। তারপর এদিকে হলো আবার ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ, যার ফলাফল বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা।

‘এর মধ্যেও আমরা প্রচেষ্টা চালাচ্ছি আমাদের দেশের মানুষের যেন কোনো রকম কষ্ট না হয়। তাদের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, অর্থনীতিকে গতিশীল রাখা এবং দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।’

করোনা সংকট মোকাবিলায় সরকারের দেয়া বিভিন্ন প্রণোদনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমরা নানা ধরনের প্রণোদনা দিচ্ছি এবং প্রণোদনা দিয়েই আমরা অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছি। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ দশমিক ২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। আমরা চাই, আমাদের দেশ আরও উন্নত হবে।’

সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) যেমন সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট (এসডিজি) বাস্তবায়নেও সরকার পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের মানুষের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা, খাদ্য নিরাপত্তা ও খাদ্য পুষ্টির নিশ্চয়তা একান্তভাবে অপরিহার্য। জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাবে, কিন্তু আমাদের ভৌগোলিক সীমারেখা বৃদ্ধি পাবে না।

‘সেটা মাথায় রেখে আমরা গবেষণা করছি। খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি, খাদ্য চাহিদা পূরণ করা, সুপেয় পানি-স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে আমরা গবেষণা করে যাচ্ছি এবং তা বাস্তবায়নও করে যাচ্ছি।’

দেশকে সুরক্ষিত রাখতেই ডেল্টা প্ল্যান

আগামী প্রজন্মের জন্য সুরক্ষিত বাংলাদেশ নিশ্চিত করতেই ডেল্টা প্ল্যান ২১০০ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ একটি ব-দ্বীপ। কাজেই এই ব-দ্বীপটাকে আমাদের এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আমরা পদক্ষেপ নিয়েছি।’

টানা তিন মেয়াদের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়েই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, বাংলাদেশকে যাতে আমরা সুরক্ষিত করতে পারি। শুধু আজকের জন্য না, আমাদের আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশ যেন টেকসই হয়, অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতি হয় এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আমরা অর্জন করতে পারি।’

ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসায় নেদারল্যান্ডসকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বন্ধুপ্রতিম অন্যান্য দেশগুলোকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা একটি তথ্যপ্রযুক্তি ও বিজ্ঞানভিত্তিক টেকনো ইকোনোমিক মহাপরিকল্পনা, যা পর্যায়ক্রমিক বাস্তবায়নে ২০২৫ সাল নাগাদ জিডিপির প্রায় ২ দশমিক ৫ শতাংশ অর্থের প্রয়োজন হবে। ফলে অর্থায়ন থেকে শুরু করে জ্ঞান, প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের প্রতিটি ক্ষেত্রে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং যারা আমাদের উন্নয়ন সহযোগী, তাদের অংশগ্রহণ একান্তভাবে অপরিহার্য।’

দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিনিয়ত আমাদের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করে চলতে হয়। বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন, লবণাক্ততা, পাহাড় ধস প্রতিনিয়ত আমাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে।’

জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।

তিনি বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অথচ জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কোনোমতেই দায়ী নয়, কিন্তু বাংলাদেশকে এ আঘাতটা সহ্য করতে হবে। সে ক্ষেত্রটা চিন্তা করে আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। কিছু স্বল্পমেয়াদি, কিছু মধ্যমেয়াদি ও কিছু দীর্ঘমেয়াদি।’

এ ক্ষেত্রেও ডেল্টা প্ল্যান বাস্তবায়ন গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ডেল্টা প্ল্যান আমরা এই কারণে নিয়েছি, যাতে শত বছরে বাংলাদেশ টেকসই হয়। আমরা চাই, আমাদের দেশটা এগিয়ে যাবে, আরও উন্নত হবে।

‘জলবায়ু অভিঘাত থেকে আমাদের জনসংখ্যাকে বাঁচানো, পাশাপাশি তাদের খাদ্য, বাসস্থান, চিকিৎসা, শিক্ষা, কর্মসংস্থান—মৌলিক চাহিদাগুলো যেন আমরা পূরণ করতে পারি, সে বিষয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা নিয়ে তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।’

আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর