প্রত্যাশা টিভি ডেস্ক :
বেতন-ভাতা বাড়ানোর দাবিতে পোশাক শ্রমিকদের সাম্প্রতিক আন্দোলন নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী শেখ বলেছেন, কারখানা বন্ধ হয়ে গেলে আমও যাবে, ছালাও যাবে। কর্মহীন হয়ে ঘরে ফিরে যেতে হবে।
করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বজুড়ে দ্রব্যমূল্য যখন ঊর্ধ্বমুখী ও রপ্তানি যখন শঙ্কার মুখে তখন দেশে অশান্তি বা অস্থিরতা তৈরি করা দেশের জন্য ও নিজের জন্যও ক্ষতি বলেও মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান।
রাজধানীর গুলিস্তানে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে মঙ্গলবার সকালে বাঙালির মুক্তি সনদ ঐতিহাসিক ‘৬-দফা দিবস’ উপলক্ষে আওয়ামী লীগের আলোচনা সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয় সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘উন্নত দেশগুলোতে গার্মেন্টসসহ আমরা যেসব পণ্য রপ্তানি করি, দেখতে পাচ্ছি কয়েকদিন আগে থেকে শ্রমিকরা আন্দোলন করছে। আন্দোলন করে ঠিক আছে, কিন্তু যেসব দেশ আমাদের পণ্য কিনবে, আমরা তাদের কাছ থেকে এখন ভালো একটা সুবিধা পাচ্ছি, উৎপাদন বাড়ছে। শ্রমিকদের বেতন তো বন্ধ হয়নি।
‘আমরা তো সেখানে নিজেরা প্রণোদনা প্যাকেজ দিচ্ছি, টাকা দিয়েছি, ভর্তুকি দিচ্ছি যেন বেতনটা সরাসরি গার্মেন্টস কর্মীরা পায়। সেই ব্যবস্থাটা করেছি। প্রত্যেকটা শ্রমিক যেন টাকা পায়, আমরা সরাসরি ফোনের মাধ্যমে এই শ্রমিকদের টাকা দিয়েছি। মালিকদের হাতে তো দেইনি, সরাসরি তাদেরকে দিয়ে দিয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে বেতন বাড়ানো, নানা ধরনের এটা সেটা আন্দোলন যদি করতে যায়, আর রপ্তানি যদি বন্ধ হয়, তাহলে ওই গার্মেন্টসহ সব কারখানা তো বন্ধ হয়ে যাবে। তখন আমও যাবে ছালাও যাবে। বেতন আর বাড়বে না, তখন চাকরি চলে যাবে। তখন ঘরে ফিরে যেতে হবে। তখন কী করবে?’
যারা আন্দোলনে উসকানি দিচ্ছে, তারা কাদের প্ররোচনায় উসকানি দিচ্ছে সেটাও সবাইকে ভেবে দেখার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, ‘কারও কথায় কোনোরকম অশান্তি সৃষ্টি করলে দেশেরও ক্ষতি, নিজেরও ক্ষতি। এটাও সবাইকে মনে রাখতে হবে। আমার তো মনে হয় শ্রমিক নেতা এবং শ্রমিকদের এ কথাটা জানানো উচিত।
‘যাদের কথায় নাচো, নেতাদের তো কোনো অসুবিধা নেই। তারা যেখান থেকে উসকানি পাচ্ছে, সেখান থেকে ভালো অংকের টাকাও পাবে। কিন্তু শ্রমিকদের ভাগ্যে কি হবে? এদেরকে রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে তাদের ক্ষতিই তো করা হবে। সেটা তো মাথায় রাখতে হবে। যখন বেতন একেবারে বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা, তখন সরকারের পক্ষ থেকে টাকা দিয়ে তাদেরকে বেতন দিয়ে গেছি।’
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি সামনে এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিনিসের দাম কিছু বেড়ে গেছে এটা ঠিক। এটা যে আরও কত বাড়বে তারও ঠিক নেই। এটা তো বাংলাদেশ বলে না, এটা তো সারা বিশ্বব্যাপী। আমাদের দেশে তাও আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পেরেছি। আমাদের আপ্রাণ চেষ্টা আছে। আমরা সামনে বাজেট দিতে যাচ্ছি। সেখানেও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি আমাদের উন্নয়ন এবং সবকিছু যেন সামঞ্জস্য থাকে, সে চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমি খুব খোলাখুলি বাস্তব কথা বললাম। কারণ যারা কিনবেন তাদের ক্রয় ক্ষমতাও তো নেই। যে দেশে রপ্তানি করে তাদের ক্রয়ক্ষমতাও কিন্তু সীমিত হয়ে যাচ্ছে। দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে। আমরা আমেরিকায় পাঠাই, ইউরোপে পাঠাই, আমরা বিভিন্ন জায়গায় পাঠাই, প্রত্যেক জায়গায় জিনিসের দাম বেড়ে গেছে।
‘সেখানে মানুষ যে দুরবস্থায় আছে, কত মানুষ না খেয়ে দিন কাটাচ্ছেন। সে তুলনায় বাংলাদেশে এখনও আমরা অন্ততপক্ষে সবার খাদ্য, ওষুধ, ভ্যাকসিন সবকিছু আমরা অন্তত দিয়ে যেতে পারছি। সেখানে যদি কেউ কোনোরকম অশান্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে যায়, তাহলে আমি বলব যে শেষে এ কূল ও কূল দুকূল হারাতে হবে। এটা যেন সবাই মনে রাখে।’
সবাইকে মিতব্যয়ী হতে হবে
বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের সকলকে মিতব্যয়ী হতে হবে। কোনো রকম খাদ্য যেন নষ্ট না হয়। সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে।’
এই সময়টাতে সবার সঞ্চয়ী হওয়া উচিত বলেও মনে করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘প্রত্যেককে যার যার নিজের নিজের সঞ্চয় করা, নিজের ব্যবস্থা করা, নিজেকে করতে হবে। কারণ সব তো আর সরকার করে দিতে পারবে না। কিন্তু নিজেদের করতে হবে।’
দেশের জনগণ ও নিজ দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে সরকারপ্রধান বলেন, ‘দিন যত যাচ্ছে, এই যুদ্ধ কিন্তু এত তাড়াতাড়ি থামবে বলে মনে হয় না। এই যে আমরা জাহাজে করে পণ্য পরিবহন করি, যেটা ৮০০ ডলারে হতো সেটা এখন আড়াই হাজার-তিন হাজার ডলার হয়ে গেছে। কাজেই জিনিসের দাম তো বাড়বে।
‘কাজেই আমাদের চেষ্টা করতে হবে আমাদের মাটি আছে, যতটুকু পারি আমাদের উৎপাদন বাড়াব। আমাদের নিজেদের খাদ্যটা যেন আমরা নিজেরা উৎপাদন করতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কেউ যদি এখন আন্দোলন করে এই কারখানা বন্ধ, ওই কাজ বন্ধ করে, তো কারখানা বন্ধ হলে তো চাকরিও চলে যাবে। সেটা কিন্তু মাথায় রাখতে হবে। তখন এর বেতন বাড়া না, বেতনহীন হয়ে যেতে হবে। সেটা যদি না বোঝে আমাদের কিছু করার নেই।’
সরকারের সক্ষমতার প্রসঙ্গ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বেসরকারিখাতে আমরা আর কত দেব? আমরা তো ভর্তুকি দিয়ে যাচ্ছি। সব ধরনের প্রণোদনা দিয়েছি। এর বেশি দেয়া তো সম্ভব না। সেটা তো মাথায় রেখে চলতে হবে।’