স্টাফ রিপোর্টার :লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে আসমা আক্তার নামের এক নারী সাংবাদিকের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। তিনি অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেশ কালান্তরের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
পুলিশ জানায়, মঙ্গলবার (১৮ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে পৌর শহরের মৌলভীবাজার এলাকার আমির হোসেন ডিপজলের বাসার পাঁচতলা ভবনের একটি কক্ষ থেকে ফ্যানের সাথে ওড়না দিয়ে গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় এই নারী সাংবাদিক আসমার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
মৃত্যুর আগে আসমা নিজের ফেসবুক আইডিতে (Asma Akter) মৃত্যুর জন্য তাঁর বতর্মান স্বামী দেশ কালান্তরের সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বাচ্চুকে দায়ি করে একটি স্ট্যাটাস দেন- ‘আজকে যদি আমি মারা যাই এর সম্পূর্ণ দোষ বেলায়ত হোসেন বাচ্চুর। সে আমাকে প্রলোভনে ফাঁসিয়েছে। বেলায়েত হোসেন বাচ্চু তুমি এপারেও শান্তি পাবে না,ওপারেও শান্তি পাবে না।আল্লাহ হাফেজ।’
লেখাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট দেয়ার ২ ঘণ্টা পর পাশের বাসার ভাড়াটিয়ারা ভাড়া বাসার খোলা দরজা দিয়ে তাকে ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।
জানাযায়, খুলনার মেয়ে সাহসী সাংবাদিক আসমা আক্তার তার স্বামীর বাড়ি বরিশালে থেকে অনলাইন নিউজ পোর্টাল দেশ কালান্তরে দীর্ঘদিন যাবৎ সাংবাদিকতা করে আসছিলেন। এই সুত্রে দেশ কালান্তরের সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বাচ্চুর সাথে তার পরিচয় হয়। একপর্যায়ে সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বাচ্চু তাকে ফুসলিয়ে প্রেমের ফাদে ফেলে এবং নিউজ পোর্টালের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক হিসেবে নিয়োগ দেয়। এরপর বেলায়েত হোসেন বাচ্চু অফিসের কাজের কথা বলে বিভিন্ন সময় আসমা আক্তারকে লক্ষীপুরের রামগঞ্জে নিয়ে ভোগ করতে থাকে। বিষয়টি জানাজানি হয়ে যাওয়ায় দুই সন্তানের জননী আসমা আক্তার তার ব্যবসায়ী স্বামীকে তালাক দিয়ে পাঁচ বছরের ছোট ছেলে তুতুলকে সাথে নিয়ে গত দুই মাস আগে বেলায়েত হোসেন বাচ্চুকে বিয়ে করে।
এদিকে বেলায়েত হোসেন বাচ্চুর প্রথম স্ত্রী বতর্মান থাকায় তিনি সাংবাদিক আসমাকে নিজের বাড়িতে না নিয়ে রামগঞ্জ পৌর শহরের মৌলভীবাজার এলাকার আমির হোসেন ডিপজলের বাসায় ঘর ভাড়া করে থাকতে দেয়। কিন্তু সেখানেও তার প্রথম স্ত্রী রোজিনা বেলায়েত ওরফে নাজমা এসে একাধিকবার আসমাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে। এমনকি বেলায়েত হোসেন বাচ্চু নিজেও প্রথম স্ত্রীর পক্ষ নিয়ে আসমাকে নির্যাতন করায় তাদের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়াঝাটি লেগে থাকে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা যায়।
বেলায়েত হোসেন বাচ্চুর ছোট ভাই জাকির হোসেন বলেন, ‘তার ভাই আসমা নামের এক নারীকে দ্বিতীয় বিয়ে করে মাত্র দেড় মাস ধরে এ বাসায় ভাড়া থাকেন। আসমার সাথে তার পূর্বের স্বামীর ঘরের পাঁচ বছর বয়সী তুতুল নামের একটি ছেলে রয়েছে। আমার মা বাড়িতে অসুস্থ, তাছাড়া বাড়িতে ভাইয়ের স্ত্রী সন্তানরা রয়েছে। তবু আমার ভাই এবং আসমা তাদের একটুও খবর নেয়নি।’
একই বাসার ভাড়াটিয়ারা জানান, গত মাস দেড়েক আগে বেলায়েত হোসেন বাচ্চুর দ্বিতীয় স্ত্রী আসমা আক্তার তার সন্তানকে নিয়ে এ বাসায় বসবাস করে আসছেন। কিন্তু যেদিনই তার স্বামী এই বাসায় আসতেন তার পরপরই আসমার সতীন রোজিনা ওরফে নাজমা চলে আসতো এবং তিনজনের মধ্যে ঝগড়া শুরু হতো। গত কিছুদিন যাবৎ প্রতিদিন এ পরিবারে ঝগড়াঝাটি লেগে থাকত। প্রায়ই মারধরসহ কান্নাকাটির আওয়াজ এলে ভাড়াটিয়ারা ভবন মালিককে জানালেও তিনি কর্ণপাত করেননি।
স্থানীয় লোকজন জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে বেলায়েত হোসেন বাচ্চু দরবেশপুর ইউনিয়নের শোশালিয়া গ্রামে বিয়ে করেন। সে ঘরে স্ত্রী নাজমা আক্তার ও তিন সন্তান রয়েছে। বছর দেড়েক আগে বেলায়েত হোসেন বাচ্চু খুলনার এক নারীর সাথে পরকীয়ায় লিপ্ত হলে সংসারে অশান্তি দেখা দেয়। এ ঘটনার জের ধরে সংসারে অশান্তি লেগে থাকত। বিষয়টি নিয়ে কয়েক দফা বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। অবশেষে গত মাস দেড়েক আগে খুলনার সেই নারী ( আসমা আক্তার) কে বিয়ে করেন তিনি।
রামগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি,তদন্ত) কার্তিক চন্দ্র দে জানান, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে ফাঁস লাগানো অবস্থায় আসমা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করেছি। ময়নাতদন্তের জন্য প্রক্রিয়া চলছে।